নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ম্যাচের আগের দিন কলকাতায় এসেই গোটা দলের সঙ্গে এক দফায় বৈঠক করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। তাতে লাভ কিছু হয়নি। ডাচদের কাছে নাকানিচুবানি খেয়েছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচের পরদিন আবার ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেছেন বোর্ড প্রধান। এবার আর একসঙ্গে নয়, কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে তিনি বসেছেন আলাদা করে। 


সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজদের কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন দলের বিপর্যস্ত অবস্থার কারণ। দলের ব্যর্থতার পেছনে তারা সবাই ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কথাই বলেছেন। দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পেরে তারা আক্ষেপে পুড়ছেন বলেও দাবি নাজমুল হাসানের। শেষ তিন ম্যাচে ভালো কিছু করতে ক্রিকেটাররা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও জানালেন বোর্ড প্রধান।


এমনিতে বেশির ভাগ সময় বড় কোনো আসরে শুরু থেকেই দলের সঙ্গে দেখা যায় নাজমুল হাসানকে। এবার ছিল ব্যতিক্রম। কলকাতা পর্বের আগে তিনি ভারতে আসেননি। সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে তার তুমুল আগ্রহের কথাও সবার জানা। কিন্তু বিস্ময়করভাবে, এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন তিনি। 





রোববার ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈঠকের পর অবশ্য সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন তিনি। তবে ব্যতিক্রমী ঘটনা দেখা গেল এখানেও। সাধারণত তার সংবাদ সম্মেলন মানেই নানা প্রশ্নের ভিড়। কিন্তু এবার তিনি স্রেফ নিজের কথা বলে গেছেন মিনিট দশেক ধরে। কোনো প্রশ্নোত্তর পর্বের সুযোগ রাখেননি। 


নাজমুল হাসান জানালেন, মূলত দলকে সাহস জোগাতেই তিনি কলকাতায় এসেছেন। এখনও পর্যন্ত দলের পারফর‌ম্যান্সে হতাশার কথাও তিনি লুকালেন না।


“আমার আসলে এখানটায় আসার পেছনে কারণ একটিই ছিল। পরপর চারটি ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর আমার মনে হয়েছে, যদিও দলগুলি শক্তিশালী ছিল… তারপরও মনে হয়েছে, ওদের মনোবল চাঙা করা যায় কি না। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, ওরা মানসিকভাবে একটু ডাউন। ওদেরকে কিছু করা যায় কি না। আমি পরশু দিন এসে ৫-১০ মিনিট বসেছিলাম, গোটা দলের সঙ্গে কোচিং স্টাফসহ। বলেছি যে তোমাদের প্রত্যেকের ওপর বিশ্বাস আমার আছে।”


“দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের প্রথম দিকের চার-পাঁচজনই রান পাচ্ছে না। যেটা আগে কখনও আমরা বাংলাদেশ দলে তো দেখিইনি, আমি কোনো দলেই দেখিনি। এই ধরনের একটি টুর্নামেন্ট খেলতে আসা কোনো দলেই দেখিনি। এটা অপ্রত্যাশিত একদমই।”


আগের ম্যাচগুলিতে পরাজয় বোধগম্য হলেও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে এমন হার মানতেই পারছেন না নাজমুল হাসান। ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলাদা করে বসার কারণও তিনি ব্যাখ্যা করলেন।


“কালকের ম্যাচটি দেখার পর যা হলো, এটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। এটা চিন্তা করা তো দূরে থাক, মেনে নেওয়া দূরে থাক, আমরা ভাবতেই পারি না যে, এতদিন ধরে এই অবস্থা হতে পারে। কিন্তু হলো তো! এজন্য আজকে ঠিক করলাম, আলাদা করে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসব। কয়েকজনের সঙ্গে এর মধ্যেই কথা বলেছি। ওদের সঙ্গে বসে জানতে চেয়েছি যে সমস্যা আছে কি না, ঘাটতি আছে কি না, ওদের চাওয়া আছে কি না, যেটা আমরা দিতে পারি, কোনো কিছুর অভাব আছে কি না। এসব জানতে চেয়েছি।”


“সাকিবের সঙ্গে বসেছি, সবার সঙ্গে আলাদা আলাদা। মুশফিক-রিয়াদ, এই দুজন শুধু একসঙ্গে ছিল। মিরাজ, লিটন দাস, ওদের সঙ্গে বসেছি। খোলামেলা কথা বলতে বলেছি। ওদের সবার একটিই কথা, কোনো সমস্যা নেই। ওরা রান পাচ্ছে না, এটিই সমস্যা। প্রথম চার-পাঁচজন রান না পেলে এই লেভেলে এসে, তাহলে লাভ নেই। ওরা কেন পারছে না, ওরাও বুঝতে পারছে না।”


বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে দেশজুড়ে যে সমালোচনার ঝড়, ক্রিকেটার-কোচিং স্টাফ ও বোর্ড কর্তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, এসব কিছুতে আপত্তির কিছু দেখেন না বিসিবি সভাপতি। এমনকি ক্রিকেটাররাও অনুশোচনায় ভুগছেন বলে জানালেন তিনি।


“আমাদের সারাদেশের মানুষ ক্রিকেটকে এতো ভালোবাসে, ক্রিকেটের প্রতি তাদের যে প্যাশন… তারা যে কতটা কষ্ট পেয়েছে, এটা চিন্তা করে ওদের আরও বেশি খারাপ লাগছে। কারণ ওরাই তো সুপারস্টার ছিল সব সময়। একদিন-দুই দিনের না, এত বছরের ক্যারিয়ার ওদের। ওরা রান পাচ্ছে না, ওরা নিজেরাও তা মেনে নিতে পারছে না। এটাই ওদের বললাম। মানুষ এখন খারাপ বলবে। অবশ্যই বলবে। না বলার কোনো কারণই নেই। মানুষ ক্রিকেটকে ভালোভাসে বলেই তো এধরনের খেলা খেললে বা হারলে খারাপ বলবে। মানুষজন বোর্ডকে বলবে, কোচিং স্টাফদের বলবে, খেলোয়াড়দের বলবে। এটা স্বাভাবিক।”


“আমি ওদের একটা কথা বলেছি, খারাপ সময়ে মানুষজন খারাপ বলবেই। এটাই স্বাভাবিক। কারণ ভালো সময়ে তো মানুষ মাথায় নিয়ে নাচে। তাহলে খারাপ সময়ে বলবে না কেন! এটা তাদের অধিকার। কিন্তু এই খারাপ সময়ে কেউ না থাকলেও আমরা আছি। কিসের জন্য আছি…সামনে ওরা যেন ভালো খেলে সেজন্য।”


বিশ্বকাপে টানা ব্যর্থতায় দলে পরিবর্তনের ডাক এলেও এই মুহূর্তে সেসবের কোনো সুযোগ দেখেন না বিসিবি সভাপতি। বরং বিশ্বকাপ অভিযান যেন ভালোভাবে শেষ করা যায়, এজন্য দলকে সাহস জুগিয়েছেন তিনি।


“এখানটায় খুব একটা কিছু বলার বা করার আমাদের নেই। যেহেতু একটা বিশ্বকাপ চলছে, এখানে এসে আমরা ইচ্ছা করলেও কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলেও আমরা পারব না। এটা হয়তো আপনারা সবাই বোঝেন। তাই আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের সামনে তিনটা ম্যাচ আছে। এই তিনটা ম্যাচ কিভাবে আমরা ভালো খেলতে পারি এটা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই এবং এটা করতে গেলে দুটা জিনিস লাগবে… ওদেরকে সাহস ফিরিয়ে দেওয়া। ওদের মধ্যে সাহসটা জাগানো।”


“হার-জয় বড় কথা নয়। ভালো ক্রিকেট খেলা। ওদের এটা বলছি, তোমাদের লড়াই করা উচিত। ওরা কী চায় বলুক। যখন যা লাগে, আমরা আছি। ওদের যেটা প্রয়োজন আমরা করতে রাজি আছি। ওদের কোনো পরামর্শ থাকলে আমরা নিতে রাজি আছি। ওরা কথা দিয়েছে, ওরা বসবে। ওরা বলেছে, তেমন কিছু চাওয়া বা পাওয়ার কিছু নেই। কেবলমাত্র পারফর্ম করা ছাড়া। এখন পারফর্ম মানে তো ওদের নিজেদের মধ্যে সেই সাহসটা আসতে হবে। ওদের নিজেদেরই খেলতে হবে। আমি কথা বলে মনে হয়েছে, ওরা এখন অনেক বেশি সিরিয়াস। এই ব্যাপারটা চিন্তা করছে। কিভাবে আারও ভালো করা যায়। আশা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।”